মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৭ পূর্বাহ্ন
ভিশন বাংলা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে তৃতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসনের প্রস্তাব পাস হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়, ট্রাম্পের অভিশংসন তদন্ত প্রতিবেদনে যে পরিমাণ ভোট প্রয়োজন, হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে প্রথম দুই অভিযোগের ভোট গণনায় ওই পরিমাণ ভোট পড়েছে। চূড়ান্ত হওয়ার জন্য অভিশংসনের প্রস্তাব আগামী মাসে সিনেটে পাঠানো হবে।
তার বিরুদ্ধে দু’টি অভিযোগের ক্ষেত্রেই অভিশংসনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট পড়েছে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে। প্রথম অভিযোগের ক্ষেত্রে ২৩০ ভোট পড়েছে অভিশংসনের পক্ষে এবং ১৯৭ ভোট পড়েছে বিপক্ষে। দ্বিতীয় অভিযোগের ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় ২১৬ ভোটের বেশি সংখ্যক ভোট পড়েছে। ওই অভিযোগে অভিশংসনের পক্ষে পড়েছে ২২৯ ভোট ও বিপক্ষে ১৯৮ ভোট। এই ঘটনায় দেশটির তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিশংসিত হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এতে তিনি এখনই ক্ষমতা হারাচ্ছেন না। ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করতে মার্কিন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে এটি পাস হওয়া প্রয়োজন। তবে সিনেট যেহেতু রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত তাই সেখানে এটি পাস হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ দু’টি হলো- ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার ডেমোক্র্যাট রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে ইউক্রেনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চেষ্টা করেন তিনি এবং অভিশংসনের তদন্ত করতে কংগ্রেসের কাজে বাধা সৃষ্টি করেন।
হাউজ সদস্যদের বক্তব্য:
ডেমোক্রেটিক হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি একটি উদ্বোধনী ভাষণের মাধ্যমে বুধবারের শুনানি শুরু করেন। তিনি বলেন, “শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আমেরিকানরা গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য লড়েছে এবং মরেছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের প্রতিষ্ঠাতার যে প্রজাতন্ত্রের দর্শন তা হোয়াইট হাউজের কর্মকাণ্ডে হুমকির মুখে পড়েছে”। “আমরা যদি এখনই ব্যবস্থা না নেই তাহলে তা হবে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়। এটা দুঃখজনক যে প্রেসিডেন্টের কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড এই ইমপিচমেন্টকে জরুরি করে তুলেছে। তিনি আমাদের জন্য আর কোন সুযোগই রাখেননি।” ডেমোক্রেটিক প্রতিনিধি জো কেনেডি, যিনি প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির একজন প্রপৌত্র, তিনি তার বক্তব্যে নিজের সন্তানদের সম্বোধন করে বলেন, “প্রিয় এলি এবং জেমস: এটা এমন একটা মুহূর্ত যেটাকে তোমরা তোমাদের ইতিহাসের বইতে পড়বে”। ম্যাসাচুসেটসের এই কংগ্রেসম্যান প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ‘ক্ষমতাকে নিজের মানুষদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের’ অভিযোগ তোলেন। হাউজ জুডিশিয়ারি কমিটির শীর্ষ রিপাবলিকান ডগ কলিন্স অবশ্য ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে অবৈধ এবং পক্ষপাতমূলক তদন্ত চালানোর অভিযোগ তোলেন। কলিন্স বলেন, “এই ইমপিচমেন্টের ভিত্তি হলো পূর্বানুমান”। এই ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া চলার সময় ডেমোক্র্যাটদের যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য ধরে রাখার নির্দেশনা দিয়েছিলেন মিজ পেলোসি, এমনটি বলা হচ্ছে। বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তিনি এই প্রক্রিয়াটি নিয়ে ‘দুঃখ ভারাক্রান্ত’। ইমপিচমেন্ট শুরু হওয়ার চব্বিশ ঘণ্টা আগে থেকেই এর পক্ষের আন্দোলনকারীরা রাস্তায় নেমে আসে। মঙ্গলবার রাতে নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে শত শত মানুষের জমায়েত হয়। তারা শ্লোগান দিচ্ছিলো, “আমাকে বলো, কে আইনের ঊর্ধ্বে? কেউ নয়, কেউ নয়”। বুধবার (যুক্তরাষ্ট্র সময়) ভোটের আগের রাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি ছয় পাতার চিঠি লেখেন ন্যান্সি পেলোসিকে, যেখানে তিনি মিজ পেলোসিকে ‘আমেরিকান গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধ শুরু করবার’ জন্য অভিযুক্ত করেন। হোয়াইট হাউজের প্রকাশ করা এই চিঠিতে প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, ‘এই ইমপিচমেন্ট কেলেঙ্কারির শুরু থেকেই তিনি মৌলিক সাংবিধানিক নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন’। প্রকৃতপক্ষে হাউজ জুডিশিয়ারি কমিটির প্রধান তাকে প্রমাণ দেয়ার জন্য জনসমক্ষেই আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট এটাকে রাজি হলে তার আইনজীবীর দল সাক্ষীদের জেরা করারও সুযোগ পেতেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। ট্রাম্পের চিঠির আগে নিজ দলের সদস্যদের উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে পেলোসি বলেন, নিম্নকক্ষের প্রতিনিধিরা আজ আমাদের সংবিধানস্বীকৃত অন্যতম শক্তিশালী ক্ষমতা ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আনীত অভিশংসনের পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দিতে সংবিধানের দুটি অনুচ্ছেদের আলোকে তাদের তা করার অধিকার রয়েছে। একই চিঠিতে তিনি লেখেন, জাতীয় জীবনের এ বিশেষ মুহূর্তে আমরা আমাদের শপথের প্রতি অবিচল থাকব। দেশী-বিদেশী যাবতীয় শত্রুর কালো হাত থেকে সংবিধানকে রক্ষা করতে শপথের কথা স্মরণ রাখতে হবে আমাদের। গতকাল সকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি কোনো অন্যায় করেননি। চলমান অভিশংসন প্রক্রিয়াটিকে তার বিরুদ্ধে ‘ক্যু প্রচেষ্টা’ ও ‘উইচ ট্রায়াল’ (মধ্যযুগে তথাকথিত ডাইনি হওয়ার অভিযোগে সংঘটিত প্রহসনের বিচার) বলে অভিযোগ এনেছেন তিনি। গতকাল এক টুইট বার্তায় এ দাবি করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।